স্বদেশ ডেস্ক:
করোনা ভাইরাস নিয়ে বিএনপি কোনো রাজনীতি করছে না, সরকারের দোষক্রটি ধরিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রীদের এই সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস একটা মহামারী। এরসাথে তো রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনীতি নেই বলেই কি আমরা সরকারের দোষক্রটিগুলো ধরিয়ে দিতে পারবো না? তারা বলবেন, রাজনীতি করবেন না। আমরা এখানে কোনো রাজনীতি করছি না। আমাদের একটা দায়িত্ব আছে, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে, সেই দায়িত্ব আমরা পালন করছি। সেই দায়িত্বের অংশ হিসেবে আজকে আমরা ঢাকাসহ সারাদেশে করোনা ভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ শুরু করেছি। এই লিফলেট বিতরণ একটি মাত্র উদ্দেশ্য, এই ধরনের মহামারী থেকে রক্ষায় জাতিকে সচেতন করা এবং আক্রান্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরার মোড় পর্যন্ত ফুটপাতে পথচারী, যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের হাতে ‘করেনা থেকে নিজেকে রক্ষা করুন’ শিরোনামে এক পৃষ্ঠার লিফলেট তুলে দেন বিএনপির মহাসচিব। এই লিফলেটে ‘খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই’ কথাটাও লেখা রয়েছে।
দলের সব কর্মসূচি স্থগিত রাখার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা তো অলরেডি একটা বড় কর্মসূচি স্থগিত করেছি। আমাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের যে সমস্ত কর্মসূচি ছিলো তার বেশিরভাগই স্থগিত করেছি। আজ থেকে সারাদেশেই এই লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের সব শাখাগুলোকে বলে দিয়েছি তারা সজাগ থাকবে, সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং আক্রান্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। জনগণের কাছে আমরা আহবান জানাব, তারা যেন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হোন এবং সচেতনভাবে একে প্রতিরোধের জন্য সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেকটা দেশেই এই করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার জন্য, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ইমার্জেন্সি বা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছে। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশে সেই সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়নি। আমরা লক্ষ্য করলাম প্রথম দিকে এটাকে গুরুত্বই দেয়া হয়নি। সরকারের ভাষ্যতে, তিনজন আক্রান্ত হওয়ার পরে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। আমরা এখন যেটা লক্ষ্য করছি, আমাদের পোর্টগুলোতে এই ধরনের স্ক্যানিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই, আমাদের এয়ারপোর্টে যে স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা আছে, এটা এতোই অপর্যাপ্ত যে, চীনা রাষ্ট্রদূতকে পর্যন্ত বলতে হয়েছে যে, এখানে পর্যাপ্ত স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা নেই। আজকের খবরের কাগজে দেখলাম, ঢাকা এয়ারপোর্টে একটি স্ক্যানিং মেশিন বাড়ানো হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেটে মোট তিনটা বাড়ানো হয়েছে। এটা একেবারেই অপ্রতুল। অন্যদিকে যে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে এয়ারমার্ক করা হয়েছে সেগুলোতে সব রকম সুযোগ-সুবিধা এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা এটা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। আমরা বলতে চাই যে তারা অনেক দেরি করে এই কাজগুলো শুরু করেছেন। রাজনৈতিক কারণে তারা বিশেষ বর্ষ পালনের ফলে এই দিকে কোনো নজর দিতে পারেননি। উন্নয়নের ঢামাঢোল বাজানো হচ্ছে সবসময়ই, দুর্ভাগ্য যে আমাদের স্বাস্থ্য সেবা, আমাদের হেলথ সেক্টার এতোই দুর্বল, এতো অপ্রতুল এবং এতো অব্যবস্থাপনা যে, সাধারণ মানুষ কখনোই সেখানে সেবা পাচ্ছে না। আজকে দেখুন, ব্যাংঙের ছাতার মতো মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হচ্ছে, টাকা দিয়ে শুধু সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ঢুকানো হয় এবং একটা সার্টিফিকেট দেয়া হয়। সত্যিকার অর্থে তারা চিকিৎসক হয়ে বেরুতে পারছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন না। একই সাথে সরকারি হাসপাতালগুলোর যে অব্যবস্থাপনা এটা কখনোই একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশের জন্য কাম্য নয়। যেহেতু তারা জোর করে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই্, তাই স্বাস্থ্য সেবায় কী হলো, শিক্ষা ব্যবস্থায় কী হলো এখন পর্যন্ত সেটা জনগণকে জানাতে পারছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গত সংবাদ সম্মেলন বলেছিলাম, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আজকে আমি পত্রিকায় দেখলাম, আমেরিকায় সমস্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে এবং মহামারী ঘোষণা করা হয়েছে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে। ভারত সমস্ত নতুন করে ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ সারা বিশ্বই আজকে এই বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। আমরা যেটা মনে করি যে দেশে গণতন্ত্র থাকলে, গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে এই সমস্যাগুলো তৈরি হতো না। অন্ততঃ প্রতিরোধ এবং কিউর করার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা সরকার নিতে পারতো।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি একটা জাতীয় দাবি, গণদাবি। এরসাথে কোনো রাজনৈতিক প্রশ্ন নাই। মানবিক কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া- জরুরি একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত রাত ১০টায় মার্কিন মানবাধিকার যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে সেখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বলা হয়েছে যে, তার বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল যে মামলা হয়েছে তা ক্রটিহীন। তার মুক্তির বিষয়টিও রাজনৈতিক কারণ বিলম্বিত করা হয়েছে। আমরা যে কথাগুলো বলছি, তা মানবিক কারণেই বলছি। প্রত্যেকটা নাগরিকের অধিকার আছে, সে যদি বন্দি থাকে চিকিৎসা পাওয়ার এবং জামিন পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে। আমরা তো আইনের মধ্যে থেকেই জামিন চেয়েছি, আমরা বাইরে গিয়ে তো জামিন চাই না। সেই কারণে আবারো বলছি, আমরা এ নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামী নেতা, যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছে গণতন্ত্রের জন্যে, তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে যার অবদান রয়েছে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক।
এসময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিনুল ইসলাম, সেলিম রেজা হাবিবসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।